মো. তোফাজ্জল হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে স্কুলের একাডেমিক ভবনেই চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন যাবৎ এই কোচিং বাণিজ্য চলছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার আম্রকানন উচ্চ বিদ্যালয়ে। জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের লোভ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক বিন্দাবন শর্মা নেতৃত্বে প্রায় ৩০০ ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করাচ্ছেন সহকারি শিক্ষক মো. মনসুর আলী, মো. সাইদুল ইসলাম, সদীত্য সেন ও সতীশ চন্দ্র শীল। সোমবার সকালে সরজমিনে গিলে একাডেমিক ভবনে একযোগে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলায় কোচিং করানো হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী রেখে শিক্ষকরা পালিয়ে যায়। কোচিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ক্লাসে তো আর সব পড়ানো হয়না আবার কোচিংয়ে না পরলে স্যারেরা পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেয় না। তাই বাধ্য হয়েই জনপ্রতি ১ হাজার ২শত টাকা বেতন দিয়ে সকাল-বিকাল পড়তে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবকরা অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার দাবিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিন্দাবন শর্মা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের লোভ দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চালাচ্ছেন এই কোচিং বাণিজ্য। ভালো ফলাফলের আসায় ও স্যারদের চাপাচাপিতে বাধ্য হয়েই স্কুল সময়ের বাইরে কোচিংয়ে পাঠাতে হচ্ছে তাদের ছেলে-মেয়েদের। উপজেলার সচেতন মহল জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ‘২০১২’ এর ১৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ ধারায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধি ‘১৯৮৫’ এর অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ থাকলেও নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকরা। কোচিং করলে শিক্ষকরা প্রশ্ন দিয়ে দেন, ফলে সবাই বেশ নম্বর পায়।
“যারা প্রশ্ন পায় না, তারা তো এত নম্বর তুলতে পারে না। কিন্তু এই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে না, যারা কোচিংয়ে প্রশ্ন পেয়ে ভালো করছে তাদেরই ক্ষতি হবে। “এ ক্ষতিটা অপূরণীয়। শিক্ষকরা স্কুলকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানাতে গিয়ে এ অপরাধটা করে যাচ্ছেন ও অভিভাবকরাও বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে”। এ ব্যাপারে আম্রকানন স্কুলের সভাপতি হরিপদ অধিকারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক বিন্দাবন শর্মার সহযোগিতায় অবৈধভাবে স্কুল কক্ষ ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সকাল-বিকাল কোচিং করানো হয়। প্রধান শিক্ষকের পরিবারের ৫ জন স্কুলে শিক্ষকতা করে বলেই পারিবারিক স্কুল মনে করে। আমাকে না জানিয়ে ও কোনো গুরুত্ব না দিয়ে এ কোচিং চালানো হচ্ছে। তার বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষকের কাকাতো ভাই কানাই লাল সরকার স্কুল মাঠে এসে সভাপতির সাথে হট্টগোল শুরু করে। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক বিন্দাবন শর্মার কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল প্রশ্ন এড়িয়ে যান ও স্কুলে কোচিং বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানান। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কন্দর্প নারায়ণ রায়ের সাথে মুঠো ফোনে কোচিং বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply